কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহারে দেশে নীতিমালা না থাকায় দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে। দেশের অনলাইন জগতে সামপ্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। কিন্তু এআই ব্যবহার করে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না তার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এর পরিধির কোনো সীমা থাকছে না। তাতে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে নানা ঝুঁকিও বাড়ছে। যদিও বর্তমান সরকার নতুন এআই নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ও বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এআই ব্যবহারে শুধু নীতিমালাই নয়, এ বিষয়ে আইনও জরুরি। বর্তমানে নতুনভাবে ন্যাশনাল এআই পলিসি বানাতে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য ইউনেস্কো এআই রিডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডলজি রিপোর্ট তৈরি করছে। তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যাযয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২০ সালে তৎকালীন সরকার প্রথমবারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছিল।। তারপর জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালার খসড়া গত বছর প্রথমবারের মতো প্রকাশ করা হয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রণয়নের কথাও ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তা থমকে যায়। তারপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আইসিটি বিভাগের প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজি’তে এআই ব্যবহারের ওপর গুররুত্ব দেয়া হয়েছে। তাতে এআই গভর্ন্যান্সে ইনক্লুসিভিটি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের এআই নীতিমালার সমন্বয় করার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি সেখানে সরকার, প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে ডাটা গভর্ন্যান্স নিশ্চিতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি স্বাধীন ডাটা এবং এআই কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়। পাশাপাশি সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর কৌশলপত্রে সাইবার নিরাপত্তা, এআই এবং ডাটা গভর্ন্যান্স কাঠামোকে শক্তিশালী করার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান সরকারে প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইনের বেশ কয়েকটি সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে নতুন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) সত্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এআই নীতিমালা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। তারপর নতুন করে চূড়ান্ত করা হবে খসড়া সূত্র জানায়, নীতিমালা না থাকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। ফলে বহির্বিশ্বের তুলনায় দেশ কতটা পিছিয়ে আছে বা কতটা লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে তা বোঝা যাবে না। পাশাপাশি এদেশে বেশ প্রমিনেন্ট হয়ে উঠছে এআইয়ের নেগেটিভ দিকটা। তাছাড়া বিভিন্ন বড় ইভেন্ট বা বিভিন্ন জায়গায় এআই ব্যবহার করে একটি শ্রেণি মিসইনফরমেশন ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সবকিছুর জন্য একটি পলিসি খুব জরুরি। তাছাড়া এআইয়ের ব্যবহার নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক থাকা প্রয়োজন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এআই নিয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। তবে শুধু নীতিমালা করে কোনো লাভ হবে না। এআইয়ের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট আইন করা জরুরি।
এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক নীতিমালা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর আসলে কোনো ইফেক্ট নেই। এআইয়ের অপব্যবহার ঠেকাতে সুনির্দিষ্ট আইন করা জরুরি।
অন্যদিকে সাইবার আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এআইভিত্তিক অপরাধ বাংলাদেশে একটি নতুন ধরনের অপরাধ,। ফলে এটা বাংলাদেশে এখনো কম। এরই মধ্যে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা এটি নিয়ে সেমিনার করেছেন। ওসব গবেষণার ভিত্তিতে সামনে জাতীয় নীতিমালা করা সহজ হবে। তবে তা নিয়ে এখন থেকেই সরকারের প্রস্তুতি নিতে হবে। এরই মধ্যে এসে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে উৎপাদিত তথ্য-উপাত্ত কতটুকু সত্য, কতটুকু ব্যবহার করা যৌক্তিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, নতুন করে ন্যাশনাল এআই পলিসি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গত বছরের শুরুর দিকে করা পলিসি ছিল চ্যাট জিপিটি ভার্সন। এখন দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের নতুনভাবে ন্যাশনাল এআই পলিসি বানাতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ন্যাশনাল এআই এবং ক্লাউড পলিসি একসঙ্গে করা হবে। তার সঙ্গে পার্সোনাল ডাটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স, ডাটা গভর্ন্যান্স এবং ইন্টারের অপারাবিলিটির সমন্বয় সাধন করা হবে। তিনি জানান, ইউনেস্কো বর্তমানে এআই রিডিনেস অ্যাসেসমেন্ট মেথডোলজি রিপোর্ট তৈরি করছে বাংলাদেশের জন্য। তারা বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে এ কাজ করছে একযোগে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ মতামত এলে সেগুলোকেও গুরুত্ব সহকারে আমলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি পাবলিক কনসালটেশনও করা হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

নীতিমালা নেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে, ঝুঁকি বাড়ছে
- আপলোড সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ১০:৩৭:৪৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৮-২০২৫ ১২:০১:০১ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ